সুন্দরবন ইলিশ উৎসব ২০২৩
ছবি: সর্ষে ইলিশ
বাঙালির বার মাসে তেরো পার্ব্বন। আর তা যদি হয় সুন্দরবন ইলিশ উৎসব ২০২৩ এর মতো জিভে জল আনা রসনা নিবৃত্তের তাহলে তো কথাই নেই! পায়ের তলায় সর্ষে আর ইলিশের টান বাঙালিকে বাঘ মধুর জঙ্গলে টেনে নিয়ে যাবেই। সুন্দরবন ইলিশ উৎসব ২০২৩ আপনার জন্য এরকমই এক বর্নাঢ্য অনুষ্ঠান। যা প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করার পাশাপাশি আপনাকে স্থানীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে আপনার পরিচয় ঘটায়। রকমারি রান্নার শৈলী সমন্ধে আপনি জানতে পারবেন।
বর্ষার ইলিশে গুড়ি বৃষ্টি গায়ে মেখে জোলো হাওয়ায় পাল খাটিয়ে গভীর অরণ্যের মধ্যে একদিকে দক্ষিণ রায়ের অন্বেষণ আর রকমারি ইলিশি পদের আহার আপনার স্মৃতির মণিকোঠায় বহু বছর রয়ে যাবে।
পৌরাণিক কথা ও ইতিহাসে ইলিশের উল্লেখ
ইলিশ উৎসবের সূচনা
মিথ আর ইতিহাসেও ইলিশের প্রভাব ব্যাপক। হিন্দুশাস্ত্রে বিষ্ণুর দশ অবতারের প্রথম অবতার হলো মৎস্য। বিষ্ণুধর্মসূত্রে মৎস্য নিধনকারী, মৎস্যচোরদের জরিমানার ব্যবস্থা ছিল। মনুস্মৃতিতে মাছ চুরিতে দ্বিগুণ দণ্ডের ব্যবস্থা ছিলো। দ্বাদশ শতকের বিভিন্ন রচনাতেও ইলিশের বিবরণ পাওয়া গেছে। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার উৎসবে মাতে বলে কবি সত্তেন্দ্রনাথ দত্ত তার নাম দিয়েছেন ইলশে গুঁড়ি।
অশোকের পঞ্চম স্তম্ভলিপিতে বছরে ৫১-৭২ দিন ডিমওয়ালা স্ত্রী মাছ, ছোট মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক এবং পৌষ মাসের শুক্লা চতুদর্শী, পূর্ণিমা এবং পূর্ণিমার পরদিন, অমাবস্যা ও অষ্টমীর দিনগুলোতে বছরে কমপক্ষে ৫২ দিন থেকে ৭২ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিলো।
স্বরস্বতী ও লক্ষ্মী পূজায় জোড়া ইলিশকে ধরা হয় শুভ লক্ষণ। দশমীতে তাই উৎসব জমে জোড়া ইলিশেই। ইলিশ উৎসর্গ ছাড়া অনেক পূজাই অসম্পূর্ণ থাকে। পান্তা-ইলিশে উদযাপিত হয় পহেলা বৈশাখ। তবে ইলিশের ডিম ছাড়া ও জাটকার বেড়ে ওঠার সময় বলে লক্ষ্মী পূজার পর ও সরস্বতী পূজার মধ্যবর্তী সময়ে বাঙালি হিন্দুরা ইলিশ খেতো না অতীতে।
ইলশে জীবনী
বাংলা ছাড়াও ভারতের আসামের ভাষায় ইলিশ শব্দটি পাওয়া যায়। ওড়িয়া ভাষায় একে বলা হয় ইলিশি। তেলেগু ভাষায় ইলিশকে বলা হয় পোলাসা। গুজরাটে স্ত্রী ইলিশ মোদেন ও পুরুষ ইলিশ পালভা নামে পরিচিত। পাকিস্তানের সিন্ধু ভাষায় এর নাম পাল্লা। বার্মিজরা বলে সালাঙ্ক।
ব্যতিক্রমী আর অতুলনীয় স্বাদের এই ইলিশ পাতে না পড়লে নস্টালজিক বাঙালিয়ানা যেমন সম্পূর্ণ হয় না, তেমনি এর ব্যতিক্রমী জীবন চক্রের সঙ্গেও তুলনা চলে না আর কোনো মাছের। নোনা জলের এই পরিশ্রমী এই মাছ শুধু ডিম পাড়তে নদীর উজান বেয়ে উঠে যায় মিষ্টি জলে । ডিম ছাড়া হয়ে গেলে ফের ভাটার টানে ভাসে সাগরের পথে। ডিম ফুটে মাছ হওয়া জাটকাও ছোটে সাগর পানে। জীবনচক্র পূর্ণ কতে ডিম ছাড়ার সময় হলে ফের উঠে আসে নদীর অগভীর জলে । ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে দক্ষ সাঁতারু ইলিশ। ডিম ছাড়ার জন্য এরা ১২শ’ কিলোমিটার সাঁতরাতেও রাজি। তবে গভীরতা ৪০ ফুট হলে সাঁতরাতে সুবিধা হয় ওদের। উজান বাওয়ার সময় কিছু খায় না এরা। ডিম ছাড়ে সাঁতরাতে সাঁতরাতে। একেকটি মাছ ডিম ছাড়তে পারে ২০ লক্ষ পর্যন্ত। সারা বছর ডিম দিলেও সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই সবচেয়ে বেশী ডিম ছাড়ে ইলিশ।
সমুদ্রের নোনা জল থেকে ইলিশ যতো নদীর উজানে যেতে থাকে ততো তার শরীর থেকে আয়োডিন, লবণ ঝরতে থাকে। দীর্ঘ পথ চলে যত সে মিষ্টি জলে থাকে ততোই কমে তার দেহের চর্বি, লবণ, খনিজ। বাড়ে স্বাদ। তাই সমুদ্রের ইলিশের স্বাদ কম। আর স্বাদ বেশী পদ্মার ইলিশের।
আড়াই লাফেই জীবন শেষ :
ইলিশের সমন্ধে একটা প্রবাদ প্রচলিত যে আড়াই লাফেই জীবন শেষ হয়ে যায়। কিন্তু গভীর অনুসন্ধান ও ইন্টারনেট ঘেটে য তথ্য পাওয়া তাতে একটা বিষয় পরিষ্কার ইলিশে জীবন এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয় না। আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা খানেক ও বেঁচে থাকতে দেখা যায়।
ইলিশ মাছ ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বড় ইলিশের ওজন হয় আড়াই কেজি পর্যন্ত। পুরুষের চেয়ে আকারে বড় হয় স্ত্রী ইলিশ। বাড়েও দ্রুত। মাত্র ১ থেকে ২ বছরের মধ্যেই প্রাপ্তবয়ষ্ক হয়ে যায় ইলিশ মাছ।
ইলিশ এর পদ
অন্তত ৫০ পদ্ধতিতে ইলিশ রান্না হয়ে থাকে। ভাপে, ভেজে, সিদ্ধ করে, কচি কলা পাতায় মুড়ে পুড়িয়ে, সরিষা, জিরা, বেগুন বা আনারস দিয়ে, শুঁকিয়ে শুটকি করে ইলিশ রান্না করা যায়। সর্ষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, কড়া ভাজা, দোপেয়াজা এবং ঝোল খুবই জনপ্রিয়। ইলিশের ডিম ছাড়াও কচুর পাতা ও ইলিশ মাছের কাটা বা মাথার ঘণ্টও বিশেষ একটি রান্না। বর্ষাকালে ডিম ভর্তি ইলিশ মাছ এবং সুগন্ধি চাল দিয়ে রান্না হয় ভাতুরী বা ইলিশ মাছের পোলাও।
চর্বিযুক্ত হওয়ায় ইলিশ রান্নায় তেল লাগে কম। আর এতে আছে প্রচুর ফ্যাটি এসিড। এই এসিড কমিয়ে দিতে পারে কোলেস্টেরল আর ইনসুলিনের মাত্রা।
কি কি পরিষেবা পাবেন এই সুন্দরবন ইলিশ উৎসব এ ?
- কোলকাতা থেকে এসি গাড়িতে যাওয়া ও আসা
- রাতে এসি বা নন-এসি হোটেলে থাকার সুবিধা।
- খাওয়া দাওয়ার সু বন্দোবস্ত
বর্ষায় সুন্দরবন দেখার অভিজ্ঞতা এক কথায় অনবদ্য। এই সময় যেহেতু সাধরণ পর্যটকদের সংখ্যা তুলনায় কম থাকে, তাই এই সময়ে আপনি বিভিন্ন বন্য প্রাণীর দেখা পেতে পারেন। এছাড়াও রকমারি মাছের প্রাচুর্যে আপনার মতোন ভোজন রাসিকের মন টানবেই। বাঙালি মানেই মাছ ভাতের কথা প্রথমেই মনে পড়ে। আর তা যদি হয় রুপালি শস্য তা হলে আপনার এই সুন্দরবন ভ্রমন একটি দারুন অভিজ্ঞতা এনে দেবে।
সুন্দরবন ইলিশ উৎসবের প্যাকেজ সমূহ
প্রতিটি ট্যুর কেই এমন ভাবে সাজানো থাকে যে, যা আপনি আপনার সুবিধা মতো পছন্দ করতে পারেন। একজন ভালো ট্রাভেল এজেন্টের সাথে কথা বলে আপনি আপনার ট্যুর টি বেছে নিন।